নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দ্রোহের কবি, তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ৬৫ তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে ১৬ অক্টোবর রবিবার সকাল ৯টা রুদ্র স্মৃতি সংসদ’র আয়োজনে মিঠাখালী বাজার থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি মিঠাখালী বাজার প্রদক্ষিণ করে কবির সমাধী প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে রুদ্র স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে কবির কবরে পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মিঠাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উৎপল কুমার মন্ডল, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নুর আলম শেখ,
প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, শিরিয়া বেগম নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবায়দুল ইসলাম, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম, অন্তর বাজাও শিল্পী গোষ্ঠির ভোকাল গোলাম মহম্মদ, ইউপি সদস্য উকিল উদ্দিন ইজারদার, সিপিবি নেতা কমরেড আসাদুজ্জামান টিটো, মাহারুফ বিল্লাহসহ রুদ্র স্মৃতি সংসদ এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মোংলা শাখ ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা। পরে কবির জন্মদিন উপলক্ষে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
’ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ গানের স্রষ্টা, তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ বাংলাদেশের কবিতায় অবিসস্মরণীয় এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি। ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
উল্লেখ্য, অকালপ্রয়াত এই কবি নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর নির্যাতিত মানুষের আত্মার সঙ্গে। সাম্যবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্যচেতনা ও অসাম্প্রদায়িকবোধে উজ্জ্বল তার কবিতা। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’- এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি উচ্চারণ করেছেন অবিনাশী স্বপ্ন- ‘দিন আসবেই- দিন সমতার’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্র প্রতীক’-এ। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা।
মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।