
লোকমান খাঁন(মনপুরা প্রতিনিধি)
“প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ।” এই স্লোগানকে সামনে রেখে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুত পৌছে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌছে গেলেও জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছে ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার দেড় লাখ মানুষ।
জেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মনপুরা উপজেলাটি ছোট বড় ১২ টি চরের সমন্বয়ে ৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপজেলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ওজোপাডিকো’র (ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবুশন কোম্পানী) অধীনে জেনারেটর মেশিনের মাধ্যমে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত দৈনিক ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিলো। কিন্তু ইদানিং ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় এই ৮ আট ঘন্টা বিদ্যুৎ সেবাও পাচ্ছেন না মনপুরার মানুষ। এই ৮ ঘন্টা বিদ্যুতের মধ্যেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। গত কয়েক বছর ধরে ঠিকাঠাক চলে আসলেও গত কয়েকমাস যাবৎ এই আট ঘন্টা বিদ্যুৎ নিয়ে চলছে তালবাহানা। গত একমাস ধরে মেশিন বিকলের বাহানা দিয়ে পুরোপুরি মেশিন বন্ধ করে রেখেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ না পেয়ে মনপুরার মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। এতে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে মনপুরা উপজেলার বাজার ঘাট, অফিস-আদালত, ব্যাংক, কোর্ট-কাচারী। এতে লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরাও ব্যাপক পড়ালেখার ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
এছাড়াও ৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলাটির ৩ টি ইউনিয়নে ইড কলের আওতায় সোলার গ্রীডের মাধ্যমে চড়া মূল্যে ৩০ টাকা ইউনিট দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। সোলার গ্রীডের মাধ্যমে দেয়া এসব বিদ্যুৎও এখন ২৪ ঘন্টা দিতে হিমসিম খাচ্ছে সোলার কোম্পানী। ২৪ ঘনন্টার মধ্যে ২/৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে তারা। এছাড়া চাহিদামত ভোল্টেজ না পেয়ে অতিষ্ট জনজীবন।
এদিকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সরকারি বিদ্যুৎ পৌঁছে গেলেও অজানা কারনে মনপুরা উপজেলায় এখনো জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ চালু হয়নি। ইতোমধ্যে ভোলা সদর উপজেলার চর ভবানীপুর, চর মেদুয়া ও কাচিয়ার চর, চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকুরীমুকরী ও মুজিবনগর, তজুমদ্দিন উপজেলার চর মোজাম্মেল, চর জহির উদ্দিন, মংলার চর, চর সোনাপুর ও চর আবদুল্লাহসহ ১৯ টি চরে ইতোমধ্যে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ। এসব চরের বাসিন্দাদের জীবন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলেও অন্ধকারে রয়ে গেছে মনপুরার দেড় লক্ষ মানুষের ভাগ্য।
ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুতের দাবীতে দফায় দফায় মানববন্ধন করেছে মনপুরার মানুষ। ঢাকা, ভোলা, চরফ্যাশন ও মনপুরায় একাধিকবার মানববন্ধন করা হলেও মনপুরার মানুষের ভাগ্যে জোটিনি সেই কাঙ্খিত বিদ্যুৎ সুবিধা। এমতাবস্থায় দ্রুত জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ চালু করা মনপুরার দেড় লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবীতে পরিনত হয়েছে। তাই নিকটবর্তি তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহির উদ্দিন অথবা চরফ্যাশন উপজেলা থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ মনপুরায় চালু করা সম্ভব বলে মনে করছেন সচেতন মহল।